এটি কোন বানানো গল্প নয়, ঢাকা জেলার জিঞ্জিরার একটি অভাগী মেয়ে ময়নার সত্যিকারের কাহিনী।
একটি গরিব পরিবারের তার জন্ম আর দশজনের মত সে স্বাভাবিক ছিল না, ছোট বেলা থেকেই সে অসুস্থ। কিন্তু একটি। অসুস্থ মানুষের যেই চিকিৎসা করা দরকার তা তাকে দেওয়া হয়নি। সঠিক চিকিৎসা দেয়া হলে সে অবশ্যই ভাল হয়ে যেত । কিন্তু কিভাবে দেবে এর মধ্যেও নিশ্চই অনেক কারণ ছিল। হয়ত সে মেয়ে বলেই তার পরিবার সেটার প্রয়োজন মনে করেনি বা টাকার অভাবে তার চিকিৎসা করাতে পারেনি, আমাদের সমাজের অনেক অশিক্ষিত মানুষ আছে যারা সরকারের অনেক নিয়ম মানে না অনেক সন্তানের জন্ম দেয়, মেয়েদের আবহেলা করে। ময়নার ক্ষেত্রেও তাই এমনটি হয়েছিল তার মা-বাবা অনেকগুলো সন্তানের ভরন পোষন করতে গিয়ে মেয়ে বলে ময়নাকে অবহেলা করেছে, তাকে কোন প্রকার চিকিৎসা না করে হুজুর ফকিরের কাছে নিয়ে গিয়ে কিছু তাবিজ ও পানি পড়া দিয়েছে ব্যাস এর চেয়ে বেশি একটু সেবাও সেই ময়না পায় নি, তার যখন ২ বছর তখন থেকে তার আচরন স্বাভাবিক নয়। সে খুব অস্বাভাবিক আচরন করত, মাকে কাজ করতে দিত না, অন্য সব বাচ্চাদের মারধর করত, সবাইকে কামড় দিত এগুলো বড় কোন সমস্যা নয় যেটা মানষিক ডাক্তার দেখালেই ঠিক হয়ে যেত, কিন্তু না তার পরিবার এতই অভাবী ছিল যে তার নির্দয় বাবা মা হয়ে ময়নার এসব জ্বালাতন সহ্য করতে না পেরে আড়াই বছরের বাচ্চার দুই পায়ে শিকল বেঁধে দিল, সেই থেকে আজও পর্যন্ত তার দুই পায়ে শিকল বাঁধা।
এখন তার বয়স ৩৪, সে এখনও সেই বাচ্চা রয়ে গেছে , শিকল বাঁধা অবস্থায় সে জীবন কাটাচ্ছে কিন্তু তার আচরন ঠিক আগের মতই। সবাই তাকে পাগল বলে, ঢিল ছোড়ে, মাড়ে, কেউ তাকে আদর করে না। কিন্তু তাতে তার কিছু আসে যায়
না কারণ সে কিছুই বুঝে না আদর কি? কারণ তার নিজের বাবা-মা, ভাই বোন তাকে কেউ আদর করে না। একমাত্র আল্লাহর রহমতে সে বেঁচে আছে। এত অভাব অনটন, অবহেলার মধ্যে কিন্তু একজন সুস্থ মানুষও বেঁচে থাকতে পারে না শুধু সে কিছু বুঝেনা বলে তার কোন অভিযোগ নেই । সে খুব হাসি-খুশি ভাবে থাকে সারাদিন রাস্তায় খেলাধুলা করে কেউ দয়া করে কিছু দিলে খায় নয়ত রাস্তায় যা পায় তাই কুড়ায়ে খায়।
আমরা হয়ত একটা ময়না সম্বন্ধে জানলাম এন টিভির সংবাদের মাধ্যমে। আমাদের আশে পাশে আরও যে কত অবহেলিত ময়না আছে তা ভাবতেও কষ্ট হয়। কিন্তু সেই ছোট্ট বেলায় যদি তাকে চিকিৎসা দেয়া হত তাহলে নিশ্চয়ই সে পাগল হত না।